পটভূমিকাঃ গল্পটি একেবারে প্রাথমিক পর্যায়ের অর্থনীতি বইয়ে বর্নিত ঘটনার ছায়া অবলম্বনে । গল্পটির অবতারনা এবারের বাজেট থেকে। এবারের বাজেটে দেখলাম দেশীয় শিল্পকে উৎসাহ দেয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। কারণ বিদেশী জিনিসপত্রের উপর ট্যাক্স বসানো হয়েছে। এটা খুবই একটা পপুলার চিন্তা। দেশের পণ্য কিনে হও ধন্য টাইপের। আচ্ছা ভাল কথা। এখন যদি আমেরিকা বা ইউরোপীয়ান ইউনিয়ন চিন্তা করে যে তাদের দেশের লোকজনকে দেশীয় পোশাক প্রস্তুতকারকদের ব্যাপারে উৎসাহ দিতে হবে। সে জন্য তারা বাংলাদেশ থেকে আগত গার্মেন্টস এর উপর ট্যাক্স বসিয়ে দিল। তাহলে ব্যাপারটা কি রকম হবে? মুক্ত বাণিজ্যে যে কোন বাধার পরিণতি এই গল্পের মত না হলেও অনেকটা একই টাইপের!
--------------------------------------------------------------------------
কুদ্দুস গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রীসের হেড কোয়ার্টার। দোতলার চীফ এক্সিকিউটিভের অফিস।
“এটা কি করে সম্ভব? এটা তো শিল্প আইনে নিষেধ।“ জনাব কুদ্দুস চোখ বড় বড় করে তার বড় ছেলে ইদ্রিসের দিকে তাকিয়ে বললেন।
“এটা কি করে সম্ভব? এটা তো শিল্প আইনে নিষেধ।“ জনাব কুদ্দুস চোখ বড় বড় করে তার বড় ছেলে ইদ্রিসের দিকে তাকিয়ে বললেন।
“বাবা, এইটা কোন ব্যাপারই না, এইটা আমি সামলাবো। কেউ কিছু টের পাবে না।“ ইদ্রিস হেসে বাবাকে আশ্বস্ত করল।
“কি জানি বাবা, ব্যাপারটা কিন্তু আমার মোটেও ভাল ঠেকছে না।“ কুদ্দুস সাহেব বেশ অস্বস্তির সাথে বললেন।
কুদ্দুস গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিস হচ্ছে ‘বোকার স্বর্গ’ নামক দেশটির একটি নাম করা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। ‘বোকার স্বর্গ’ স্বাধীনতার পর থেকেই কঠোর বিশ্বায়ন বিরোধী। শুরু থেকেই স্বদেশী পণ্য কিনে হও ধন্য এই নীতিতে রাজনৈতিক নেতৃত্ব বিশ্বাসী। যার ফলে তারা বাইরের দেশ থেকে কোন কিছু আমদানী করে না। এটা সেই দেশে আইন করে নিষিদ্ধ। যেমন তাদের যে ইস্পাতের দরকার ভারী শিল্প চালানোর জন্য সেটা তারা নিজেরাই তৈরী করে। কিন্তু উন্নত ইস্পাত তৈরীর কাঁচামাল বা টেকনোলজি কোনটাই দেশটিতে নেই। যার ফলে তারা নিকৃষ্ট জাতের কাঁচামাল দিয়ে মান্ধাতা আমলের কারিগরি বিদ্যা দিয়ে খুবই নিম্নমানের ইস্পাত তৈরী করে। শুধু তাই নয় এই ইস্পাতের দাম ও অনেক বেশী পড়ে যায় উন্নতমানের প্রযুক্তির অভাবে। যাই হোক এভাবেই বেশ কিছু ইস্পাত কারখানা আস্তে আস্তে গড়ে উঠছিল এবং এভাবেই তাঁরা চলছিল।
একদিন হঠাৎ দেখা গেলো কুদ্দুস সাহেব তাঁর বানিজ্য সাম্রাজ্যে যোগ করলেন কুদ্দুস এন্ড সন্স স্টীল মিল। এটি প্রতিষ্ঠার খুব অল্পদিনের মধ্যেই ব্যাপক পরিচিতি পেয়ে গেল। কারণ খুব কম খরচে তারা অন্যান্য কারখানার চেয়ে ইস্পাত বিক্রি করে। অন্যান্য কোম্পানি যেখানে প্রতি মে টন ইস্পাত ৬০০০ বোকা ইউনিটের নীচে বিক্রি করতে পারে না সেখানে কুদ্দুস স্টীল মিলস কিন্তু বিক্রি করছে মাত্র ২৮০০ বোকা ইউনিটে। শুধু তাই নয়, ইস্পাতগুলো যথেষ্ট শক্ত এবং মজবুত, সহজে মরিচা ধরেনা। আর অন্যান্য কোম্পানির ইস্পাত নিয়ে অভিযোগের অন্ত নেই।
কিন্তু একটা আশ্চর্য ব্যাপার হলো কুদ্দুস স্টীল মিলসের মূল ফ্যাক্টরীটি দেখে মনে হয় যেন সেটি একটি বিশাল জেলখানা। বিশাল কাঁটাতারের বেড়া, নিরাপত্তা প্রহরীর আনাগোণা আর হিংস্র কুকুরের ঘেউ ঘেউ। আর মজার ব্যাপার হলো সেখান তেমন কোন কর্মচারী নেই। কুদ্দুস সাহেব, তিন ছেলে আর কিছু একান্ত বিশ্বস্ত লোক ছাড়া আর কাউকে কখনও সেখানে ঢুকতে ও দেখা যায় না বের হতেও দেখা যায় না।
দৈনিক মতিকন্ঠের সাংবাদিক লিপু ঢাকুরিয়া খুবই কৌতুহলী হলেন ব্যাপারটাতে। তিনি চিন্তা করলেন যে তিনি অবশ্যই এটা নিয়ে একটা অনুসন্ধানী প্রতিবেদন চালাবেন। কিন্তু কিছুতেই তিনি ফ্যাক্টরীর আশে পাশেও ভিড়তে পারছিলেন না। হাজারটা চেষ্টা করেও মোবাইলে কুদ্দুস সাহেব বা তাঁর কোন ছেলেকে ধরা যাচ্ছে না। এতে তাঁর জেদ আরও অনেক বেড়ে গেল। একদিন সে খোঁজ পেল, ছোট ছেলে সোবহান তাঁর ভাগ্নে বুলেটকে স্কুল থেকে আনতে মাঝে মাঝে যান। সে তখন স্কুলে অপেক্ষা করতে থাকলো এবং যেই সোবহানের গাড়ি এসে থামলো অমনি তাঁকে গ্যাঁক করে ধরলো।
ভাই, আপনাকে আমার সাথে কথা বলতেই হবে।
সোবহান খুবই বিরক্তির সাথে বললো, ধুর আপনাদের নিয়ে আর পারি না। সামান্য প্রাইভেসী বলতে কিছু নেই।
কি করবো আপনাকে তো কোথাও পাওয়া যায় না।
বলেন কি বলবেন। বিরসভাবে সোবহান বললো।
ভাই আপনাদের স্টীল কোম্পানীর এই রকম ফাটাফাটি অবস্থার কারণ কি?
সোবহান কিছুক্ষন মাথা নীচু করে থাকলো, তারপর বললো এটা বিজনেস সিক্রেট বলা যাবে না।
ভাই বলেন না ভাই বলেন প্লীজ। জানেন ভাই, আজকে তিন মাস ধরে ঘুরতেছি। অফিস থেকে আসাইন্টমেন্ট দিছে। নইলে চাকরি থাকবে না। প্লীজ ভাই আমাকে বাঁচান। আকুতি ঝরে পড়ে লিপুর কন্ঠ থেকে।
সোবহান লিপুর দিকে তাকিয়ে থাকল কিছুক্ষন। তারপর মোবাইলটা বের করে ফোন করল।
বাবা কি করব, এই সাংবাদিক তো দেখি বিচ্ছু একেবারেই ছাড়ছেনা। নীচু কন্ঠে কথা বললো বেশ কিছুক্ষন সোবহান।
আচ্ছা শুনেন বেশী কিছু বলতে পারবো না, শুধু এটাই বলছি, আমাদের ইস্পাত তৈরির প্রধান কাঁচামাল হলো গম।
গম? হাঁ করে তাকিয়ে থাকলো লিপু।
জি হাঁ গম।
পরের দিন প্রধান শিরোনাম মতিকন্ঠের “ গম দিয়া ইস্পাত তৈরী কুদ্দুস গ্রুপের সাফল্যের মূলরহস্য”। দেশের সবাই ব্যাপারটা জেনে খুবই চমৎকৃত হল।
এদিকে কুদ্দুস গ্রুপের ইস্পাতের রমরমা ব্যবসা চলতে থাকল। স্টীল বা ইস্পাত তো সব শিল্প বা কল কারকারখানায় কম বেশি লাগে। কুদ্দুস স্টীলের দাম অনেক কম হওয়ায় বহু পণ্যের উৎপাদন খরচ অনেক কমে গেল। তাতে লোকজন কম খরচে অনেক জিনিস কিনতে পারলো। জীবন যাত্রার মান অনেক বেড়ে গেল।
কিন্তু কামাল বা তাঁর মত শ্রমিকদের জন্য ব্যাপারটা বেশ খারাপ হয়ে গেল। কামাল কাজ করতো সাইয়েদানা স্টীল কোম্পানিতে যারা কুদ্দুস স্টীলের সাথে পাল্লা দিয়ে পারলো না বলে বন্ধ হয়ে গেল। ফলে তিন বাচ্চার আর বউয়ের সংসারে সে বেকার হয়ে পড়লো আর প্রতিদিন কুদ্দুস স্টীলকে অভিশাপ দিতে থাকল।
এর মধ্যে দেখা গেলো কুদ্দুস স্টীল ইস্পাত ব্যবসায় মোটামুটি অপ্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে উঠছে। বিশাল ইস্পাত সাম্রাজ্য তাঁরা এর মধ্যে গড়ে তুলেছে আর কাঁচামাল হিসেবে প্রচুর গম লাগছে। ফলে অনেক বেকার তরুনরা গম চাষে মন দিল। দেশের জল কাদা গমের জন্য একেবারে সোনায় সোহাগা। সামান্য যত্ন করে চাষ করলেই ফলন উপচে পড়ে। সেই বাড়ন্ত গম বিক্রি করে দেশের অনেক সংসার অনেক দিন পরে একটু প্রাচুর্যের মুখ দেখতে পেল।
কামালের স্ত্রী একদিন এসে বললো, এই শুনছো, মোষের মত সারাদিন হাত পা ছড়িয়ে শুয়ে না থেকে একটু কিছু একটা কর। পাশের বাড়ীর হামিদের ও তো তোমার মতই চাকরি চলে গিয়েছিল। এখন তো দেখি সে দেশের বাড়িতে গিয়ে গম চাষ শুরু করে দিল। মাত্র গতমাসে ফসল তুলল। একেবারে লালে লাল হয়ে গেছে নাকি। ওর বউ নতুন শাড়ী পরে এসে কি গল্প।
কামাল এক সপ্তাহের মাথায় হাতিমতলায় তাদের পড়ে থাকা জমিতে গম চাষ শুরু করে দিল। এরকম কামালের মত আরো যাদের চাকরি নেই তারাও গম চাষে আসতে লাগল। গমের প্রচুর উৎপাদন তাদেরকে প্রচুর লাভের মুখ দেখালো।আর মানুষের জীবনযাত্রার মানের উন্নতি ঘটায় তারা আরো নতুন নতুন জিনিস কিনতে চাইল। ফলে আরো অনেক নতুন নতুন শিল্প কারখানা গড়ে উঠতে গেল। সেগুলোতে কামালের মত অন্য যার চাকরী হারিয়েছিল তাঁরা অনেকে চাকরী পেল।
এদিকে লিপু ঢাকুরিয়া কিন্তু কুদ্দুস স্টিল মিলের কথা ভুলতে পারেনা। তার ঝিঙ্গেতলার বাসা থেকে মতিকন্ঠের অফিসে যেতে যেতে পথে পড়ে হবুরাম স্টীল মিলসের গ্লোবাল হেডকোয়ার্টার। আধুনিক শিল্প সাম্রাজ্যের এই প্রতীকটার দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে ও চিন্তা করে কি করে সামান্য গম ব্যবহার করে হবুরাম এই পর্যায়ে গেল। আর কেনই বা তাদের এত গোপনীয়তা? কেন এত শত শত ক্যামেরা আর নিরাপত্তা? টেকনোলজী চুরি হয়ে যাওয়ার ভয়? তাতো হতে পারে না। পেটেন্ট নিয়ে নিলেই তো হয়। নিশ্চয়ই অন্য কিছু একটা ব্যাপার আছে। ব্যাপারটা মাথা থেকে সে কিছুতেই সরাতে পারে না।
রাত দু’টো বাজে। দুরবর্তী একটা কুকুরের ঘেউ ঘেউ ছাড়া আর কিছুই শোনা যাচ্ছে না। চারিদিকে শুনশান নীরবতা। লিপু এখন হবুরাম গ্লোবাল হেড কোয়ার্টারের ভিতরে। অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে তাকে এখানে ঢুকতে হয়েছে। এক কর্মচারীকে অনেক টাকা পয়সা ঘুষ দিয়ে তার ইউনিফর্ম আর আইডি কার্ড নিয়ে সে ভিতরে ঢুকেছে। ঢুকে তো সে বেজায় অবাক। সে আশা করেছিল অনেক মেশিনের আওয়াজে জায়গাটা গমগম করতে থাকবে। কিন্তু কোথায় কি! সারি সারি বড় বড় বাক্স ছাড়া সেখানে আরে কিছু নেই। কিছু লোকজন শুধুমাত্র বড় বড় ক্রেনে করে বিশাল বিশাল বাক্স গুলো এক জায়গা থেকে আরেকজায়গায় সরাচ্ছে!
লিপু আরেকটু এগিয়ে গেল গুঁড়ি মেরে। একটা বাক্স খুব কাছাকাছি যাচ্ছে, লিপু লেখাগুলো পড়ার চেষ্টা করলো। অনেক কিছুই লেখা আছে কিন্তু একটা জায়গার লেখা দেখে সে তাঁর হার্টবিট মিস করলো। লেখা হচ্ছে ইন্ডাস্ট্রিয়াল স্ট্রেংথ স্টীল, মেইড ইন বুলমেনিয়া। একি! বুলমেনিয়া তো হচ্ছে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় স্টীল প্রস্তুতকারী দেশ। পৃথিবীর শতকরা ৬০ ভাগের ও বেশী স্টীল বুলমেনিয়াতে তৈরী হয়। বুলমেনিয়ার ইস্পাত এখানে কি করছে? বোকার স্বর্গের শিল্প আইন অনুযায়ী তো ইস্পাত আমদানী বা রপ্তানী সম্পূর্ণ রকম নিষেধ। এটা তো দেখি এক দুই বাক্স ইস্পাত নয়, হাজার হাজার বাক্স।
লিপু আরেকটু এগিয়ে গেল। দেখল যে সব বাক্সগুলোকে ক্রেনে করে টেনে নিয়ে আরেকটি ডকিং স্টেশনে রাখা হচ্ছে। সেখানে একটা স্বয়ংক্রিয় মেশিনের মাধ্যমে বাক্সগুলো খুলে ইস্পাতের পাতগুলো আরেকটি বাক্সের মধ্যে ঢুকানো হচ্ছে। বাক্সগুলোর সবগুলোর গায়ে কুদ্দুস এন্ড সন্স স্টীল মিলস এর ছাপ মারা।
একতলার ব্যাপারটা না হয় বোঝা গেল। দোতলায় তাহলে কি? লিপু আস্তে আস্তে দোতলার সিঁড়ির দিকে এগিয়ে গেল।
সিঁড়ি বেয়ে দোতলায় উঠার সময়ে একজন ম্যানেজার টাইপের লোক নেমে আসছিল। লিপুর হাত পা হঠাৎ ঠান্ডা হয়ে আসছিল। ম্যানেজার এমন হন্তদন্ত হয়ে নামছিল যে তাঁর দিকে তাকানোর ও প্রয়োজন মনে করলো না। লিপু ছোট্ট একটা শ্বাস ছেড়ে আবার সিঁড়ি বেয়ে উঠতে লাগল।
ওমা, দোতলায় ও দেখি একই কান্ড। সারি সারি বাক্স। এগুলোর গায়ে লেখা সুপার ফাইন হুইট, ডেস্টিনেশানঃ বুলমেনিয়া।
হঠাৎ করে লিপুর কাছে সব কিছু দিবালোকের মত পরিষ্কার হয়ে গেলো। কুদ্দুস ইস্পাত কারখানা যা করছে তা হচ্ছে পুরোপুরি জালিয়াতি। তারা গম দিয়ে মোটেই ইস্পাত তৈরী করছে না। তারা গম রপ্তানী করছে বুলমেনিয়ায়, বুলমেনিয়ার জলবায়ু এবং মাটি একেবারেই গমের জন্য উপযুক্ত নয়। সেই রপ্তানীর টাকা দিয়ে তারা অত্যন্ত সস্তায় ইস্পাত আনছে।
এরপর যেদিনই বিশেষ সংখ্যায় এই চার পৃষ্ঠার অনুসন্ধানী রিপোর্ট প্রকাশিত হলো, তখন চারিদিকে ঢি ঢি পড়ে গেল কুদ্দুস গ্রুপের বিরূদ্ধে।
পরের দিনই ডিটেকটিভ ব্রাঞ্চের স্পেশাল টীম যেয়ে কুদ্দুস আর তাঁর তিন ছেলেকে ধরে নিয়ে আসলো। এরকম বিশাল জালিয়াতির ফলে আদালত কোন রকম অনুকম্পা প্রদর্শন করলো না কুদ্দুস মালিক পক্ষকে। তাদের সবার পাঁচ বছর করে বিনাশ্রম কারাদন্ড এবং ৫০ লাখ টাকা করে জরিমানা, অনাদায়ে আরো এক বছর কারাদন্ড।
এরপরের ঘটনাগুলো ঘটতে থাকলো একেবারে অনুমিত ভাবে। মালিক পক্ষের অবর্তমানে কুদ্দুস গ্রুপ আস্তে আস্তে দেনার দায়ে বন্ধ হয়ে গেল। আর কুদ্দুস স্টীল বাজার থেকে চলে যাওয়ার ফলে অন্যান্য ছোট ছোট ইস্পাত কারখানাগুলো আবার চালু হলো। কিন্তু তারা আগের মতই অনেক বেশী দামে ইস্পাত বিক্রি করতে লাগল। ফলে যেসব কারখানায় ইস্পাত কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার হতো সে সব জায়গায় উৎপাদন খরচ অনেক বেড়ে গেল এবং সে সব জিনিসপত্রের দাম অনেক বেড়ে গেল। দেশের লোকজনকে বেশি দামে জিনিস কিনতে হওয়ায় জীবন যাত্রার মান কমে আগের পর্যায়ে চলে আসতে থাকলো।
কিন্তু তাতে লিপু ঢাকুরিয়ার তেমন কিছু এসে যায় না। লিপু ঢাকুরিয়া কুদ্দুস গ্রুপের জালিয়াতির উপর রিপোর্ট করে সেই বছর রিপোর্টার্স ফোরামের বিশেষ পদক পেয়েছে। সে প্রায়ই তাঁর সাংবাদিক জীবনের এই সাফল্যের কথা চিন্তা করে বিশেষ তৃপ্তির ঢেকুর তুলে। যদিও ইস্পাতের দাম বেড়ে যাওয়ায় নতুন ফ্ল্যাটটা তাকে প্রায় দেড়গুন দাম বেশী দিয়ে কিনতে হয়েছিল।
কামাল দেখলো কুদ্দুস স্টীল মিলস বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর থেকে তাঁর খুবই লাভজনক গমের ব্যবসা আর ভাল যাচ্ছেনা। তাই সে একদিন পাততাড়ি গুটিয়ে আবার ফিরে গেল কম বেতনের ইস্পাত কারখানার মজুরের কাজে। এখন সে গালিগালাজ করতে থাকে লিপু ঢাকুরিয়া আর তাঁর পত্রিকাকে তাঁর এতো চমৎকার গমের ব্যবসা বন্ধ হয়ে যাওয়ার জন্য।
আর কুদ্দুস সাহেব জেলে বসে চিন্তা করতে থাকে তার বড় ছেলেকে অর্থনীতিবিদ বানিয়ে কি ভুলই না সে করেছে। ইদ্রিসই তাকে বুদ্ধি দিয়েছিল এই ইস্পাত আমদানী আর গম রপ্তানীর কথা, যেটা হলো মুক্ত বাণিজ্যের মুল মন্ত্র। কি কুক্ষনে না তার কথা শুনেছিল। এখন বুড়ো বয়সে জেলের ঘানি টানতে হচ্ছে। হায়রে পোড়া কপাল। হায়রে অর্থনীতি!
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন