বৃহস্পতিবার, ৯ জুন, ২০১১

দুষ্ট সিপিডি কোথাকার!



অর্থমন্ত্রী সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) নামক প্রতিষ্ঠানটিকে দুষ্ট বলেছেন। অনেকেই অনেককে অনেক কারণে দুষ্ট বলে থাকেন। আমি যেমন আমার ছেলেদেরকে অনেক সময় বলি, তোমরা কিন্তু অনেক দুষ্ট হয়েছ। তেমনি শিক্ষক বলতে পারেন কোন ছাত্রকে, এই ছেলে! তুমি কিন্ত এই ক্লাসের সবচেয়ে দুষ্ট ছেলে! আবার একটা রোমান্টিক দুষ্টও হতে পারে, যেমন, ছিঃ যাও, দুষ্টু কোথাকার!

একটি দেশের অর্থমন্ত্রী যখন সিপিডি র মত একটা হাই প্রোফাইল গবেষণা প্রতিষ্ঠানকে দুষ্ট বলেন সেটা অবশ্যই উপরের কোন দুষ্টর মত কোন ক্যাটাগরিতে পড়ে না। অবশ্যই এটা একটি অতি গুরুতর দুষ্ট। হুমম,  যথেষ্ট চিন্তার ব্যাপার। ব্যাপারটা একটু তলিয়ে দেখা দরকার।  

প্রথম আলোর জুন ৬ , ২০১১ এর রিপোর্টে আছে মাননীয় অর্থমন্ত্রী বলেছেন সিপিডির বক্তব্য ‘অত্যন্ত অন্যায়, দুষ্ট এবং টোটালি রাবিশ’। আচ্ছা তাহলে ব্যাপারটা আরও অনেক বেশী গুরুতর। দুষ্ট এর সাথে এখন যোগ হয়েছে অন্যায় এবং রাবিশ। ধ্যাত, সিপিডি এটা কি করলো? দুষ্ট তাও মানা যেতো। কিন্তু অন্যায়, রাবিশ? কোনভাবেই মানা যায় না।

এই দুষ্ট, অন্যায় এবং রাবিশ ব্যাপারটা হলো যে সরকার ঘোষনা করেছে যে এই বছরের জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার হবে ৬.৬৬ শতাংশ। আর দুষ্ট সিপিডি বলছে যে প্রবৃদ্ধির হার কোনভাবেই ৬ দশমিক ২ থেকে ৩ শতাংশের বেশী হওয়ার কথা না।

অর্থমন্ত্রীর কথায় আমি মোটেই বিস্মিত নি। এটা অবশ্যই একটা অতি দুষ্টামির পরিচয়। কেন কোন সাহসে সিপিডি এরকম দুষ্টামি করে? সিপিডি ওয়ার্ল্ড ব্যাংক বা আই এম এফ এর মত একটি আন্তর্জাতিক মাপের প্রভাবশালী প্রতিষ্ঠান হলেও একটা কথা ছিল। কিন্তু একটা দেশীয় প্রতিষ্ঠান হয়ে কিভাবে দেশের সরকারী মাপজোকের বিরোধিতা করে এটা অর্থমন্ত্রীর বোধগম্য নাও হতে পারে। এমনিতেই দেশের সামষ্টিক অর্থনীতি, শেয়ার বাজার নিয়ে অর্থমন্ত্রী একটা চাপের মধ্যে আছেন। তারপর যদি আবার জিডিপি প্রবৃদ্ধি নিয়ে কেউ ঝামেলা তৈরী করে তাহলে কেমনটা লাগে? দুষ্ট সিপিডি কোথাকার!

সিপিডির বক্তব্য মাননীয় অর্থমন্ত্রীর কানে পৌছালে তিনি বলেন যে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) জিডিপির প্রবৃদ্ধি হিসাব করে এবং এটার সাথে সরকারের কোন দ্বিমত নাই। ঠিকই বলেছেন। বিবিএস একটা সরকারী প্রতিষ্ঠান তার সাথে সরকারের দ্বিমত তো থাকার কথা থাকার না।
কিন্তু কি আশ্চর্য ! একটু পরেই তিনি আবার বলছেন যে গত বছর বিবিএসের হিসাবের সাথে মন্ত্রণালয় দ্বিমত পোষন করেছিলেন। আচ্ছা! তাহলে কোন কোন সময় সরকার আরেকটি সরকারী প্রতিষ্ঠানের সাথে দ্বিমত পোষণ করে। সুতরাং ব্যাপারটা একটু তলিয়ে দেখা দরকার কখন দ্বিমত পোষণ করে আর কখন করে না।

সিপিডি টাইপের ‘রাবিশ’ কিছু প্রতিষ্ঠানের কথা শুনে মনে হচ্ছে সরকার তখনই দ্বিমত পোষণ করে যখন প্রবৃদ্ধির হার তার পছন্দসই হয় না। সেটা করার অবশ্যই সরকারের পূর্ণ অধিকার রয়েছে। আমার যদি কিছু পছন্দ না হয় তাহলে তো আমি দ্বিমত পোষণ করতেই পারি। আমার যদি বাসার দেয়ালের রঙ পছন্দ না হয় তাহলে তো আমি সেটাতে দ্বিমত পোষণ করে বদলাতে পারি। তেমনি জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার পছন্দ না হলে সেটাও আমি বদলাতে বলতে পারি। দুষ্ট সিপিডি অবশ্য বলবে যে জিডিপি আর বাসার দেয়াল তো এক হলো না। এইসব দুষ্ট এবং রাবিশ কথায় আমরা একেবারেই কান দেইনা। এই দেশটাকে আমরা আমাদের বাসার মতই নিজের এবং আপন বলে মনে করি।

গত বছর কৃষি মন্ত্রী মতিয়া চৌধুরীর একেবারে পছন্দ হয়নি কৃষি মন্ত্রণালয়ের হিসাব যেটা বিবিএস করেছিল। আমরা শুনেছি যে সেটা তিনি অত্যন্ত কঠোর ভাষায় ব্যক্ত করতে দ্বিধা বোধ করেননি। তিনি নাকি বিবিএস এর কর্মদক্ষতার উপর বিশেষ অসন্তোষ প্রকাশ করেছিলেন। এটা তিনি বলতেই পারেন। কারণ বিবিএস এর কর্মদক্ষতার উপর অনেকের অল্প বেশী সন্দেহ আছে। অনেকেই প্রায় সময়ই গরমিল খুঁজে পান।  তাঁহলে তো সরকারকে কোন রকম ভাবেই দোষ দেয়া যাচ্ছে না। অবশ্য সিপিডি এর মতো কিছু কিছু দুষ্ট প্রতিষ্ঠান বলতে পারে সরকারের তখনই বিবিএস এর কর্মদক্ষতার উপর আস্থা চলে যায় যখনই দেখা যায় যে সেটা তাদের আশানুরূপ উচ্চ মাত্রার হচ্ছে না। বিবিএস তখন দ্রুততার সাথে তাঁদের ভুল বুঝতে পারে এবং সরকারী সন্তুষ্টি অনুযায়ী তাঁদের হিসাব নিকাশ সংশোধন করে তখন ততোধিক দ্রুততার সাথে সরকারের আস্থা বিবিএস এর উপর ফিরে আসে! খুবই স্বাভাবিক নয় কি? আমার আস্থা তাঁর উপরেই থাকবে যে আমার পছন্দ অনুযায়ী কাজ করবে। আমি বলবো একটা আর করবে আরেকটা, এরকম কারও উপর কি কোন আস্থা রাখা যায় নাকি?  

পরিশেষে এটাই বলব যে, সরকার এবং মাননীয় অর্থমন্ত্রী, আপনারা একেবারেই এইসব দুষ্ট লোকের দুষ্ট কথায় কান দিবেন না। আপনারা বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে নির্বাচিত হয়েছেন এবং এই দেশ এখন সম্পূর্ণ আপনাদের। আপনারা এখন  আপনাদের জন্য যা কিছু মংগল তা নির্দ্বিধায় করতে পারেন। যদি মনে করেন জিডিপির প্রবৃদ্ধি আরও দশমিক দুইতিন ভাগ বেশী হলে ভাল হয়, তবে তাই হোক। যদি মনে করেন তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিল হলে ভাল হয়, তবে তাই হোক।  কে কি সব দুষ্ট, অন্যায় এবং রাবিশ কথা বলছে তা একেবারেই আমলে নিবেন না। এগুলো সবই রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত বলে তুড়ি মেরে উড়িয়ে দেবেন। দেখবেন এভাবে জিডিপির প্রবৃদ্ধি দশমিক এক দুই ভাগ তো কোন ব্যাপারই না,  কিছুদিনের মধ্যেই ভারত বা চীনের ডাবল ডিজিট প্রবৃদ্ধি আমাদের নাগালের মধ্যে চলে আসবে।

1 টি মন্তব্য:

  1. রুশাদ ভাই, সিপিডি তো দেশীয় প্রতিষ্ঠান৷ আইএমএফ বা ওয়ার্ল্ড ব্যাংক এর মতন ঝাড়ি তো মারতে পারে না মাননীয় অর্থমন্ত্রীকে, উল্টো ঝাড়ি খায়৷ তাই সিপিডি কে দুষ্ট বলে গাল দেয়া জায়েজ আছে৷ আমাদের মন্ত্রী-মহোদয় এত শিক্ষিত মানুষ, কিন্তু উনি ফ্যাক্টস এন্ড ফিগারস এর ব্যাপারে একটু দুর্বল৷মাফ করে দেন৷ - হিমু

    উত্তরমুছুন